সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলী - চতুর্থ খণ্ড
সৈয়দ মুজতবা আলী
সৈয়দ মুজতবা আলী (সেপ্টেম্বর ১৩, ১৯০৪ - ফেব্রুয়ারি ১১ , ১৯৭৪) একজন বিংশ শতকী বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা। তিনি তাঁর ভ্রমণকাহিনীগুলির জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট।
অসাধারণ প্রতিভাধর সৈয়দ মুজতবা আলী রম্যলেখক ভালো কথা কিন্তু পণ্ডিতও বটে। ১৮টি ভাষা যার দখলে ছিল, সেসব ভাষায় তিনি কথা বলা থেকে শুরু করে লিখতে পর্যন্ত পারতেন। রাশিয়ান ভাষার “প্রেম” উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ, জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট, বিশ্বভারতী থেকে স্নাতক, আল-আজহারে পড়াশুনা, তুলনাত্মক ধর্মচর্চা যার নখদর্পনে, গীতা যার সম্পূর্ণ মুখস্ত আর রবীন্দ্রনাথের গীতিবিতান টপ টু বটম ঠোঁটস্থ তাকে যদি পণ্ডিত বলা হয় তাহলে কি আপত্তির থাকতে পারে?
অবশ্যই সৈয়দ মুজতবা আলীর নিজের ভাষ্য হচ্ছে. “সব কিছু যে পণ্ড করে সে পণ্ডিত”। এই কথাও যে রসে ভরা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ 'দেশে-বিদেশে', কিন্তু তাঁর অনেক রম্যরচনা 'দেশে-বিদেশে' গ্রন্থেরও পূর্বে লিখিত—সে কথা তিনি নিজেই বলেছেন। তাঁর সম্পূর্ণ রচনাসৃষ্টির বিষয়বৈচিত্র্য এমনই বিপুল ও বিভিন্ন যে, গল্প-উপন্যাস রচয়িতা কথাসাহিত্যিকদের রচনার মত তার শ্রেণীবিভাগ করা দুঃসাধ্য। যেহেতু রম্যরচনাই তাঁর লেখনীর প্রথম সৃষ্টি, এই কারণে রচনাবলীর প্রথম দিকের খণ্ডগুলিতে প্রধানত রম্যরচনার গ্রন্থগুলিই অন্তর্ভূক্ত করা হল।
সৈয়দ মুজতবা আলী রচনাবলীর এই খণ্ডে বড়বাবু, কত না অশ্রুজল, হিটলার এই তিনটি গ্রন্থ সন্ধিবেশিত হয়েছে।
গ্ৰন্থ-পরিচয়
[গ্রন্থ-পরিচয় অংশটি এই রচনাবলীর ৪১১ পৃষ্টা থেকে সংকলিত, লিখেছেন—নকুল চট্টোপাধ্যায়]
বড়বাবু
‘বড়বাবু’ মিত্র ও ঘোষ, ১০ শ্যামাচরণ দে স্ট্রীট, কলিকাতা ১২ হইতে ফাল্গুন ১৩৪২-এ প্রথম প্রকাশিত হয়। বইয়ের আকার ডবল মিডিয়ম ষোড়শাংশিত পাইকা টাইপে ছাপা, পৃষ্ঠা ২০৭। বইটির প্রচ্ছদপট আঁকেন বিখ্যাত শিল্পী শ্রীআশু বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর পরিচিত মহলে ‘বড়বাবু’ নামেই সমধিক অভিহিত হতেন। এই গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রসঙ্গ। দ্বিজেন্দ্রনাথের ব্যক্তিচরিত্র সম্বন্ধে এরকম উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ সম্ভবত আর কেউ লেখেন নি। প্রবন্ধটির নাম ‘বড়বাবু’। প্রথম প্রবন্ধের নামেই গ্রন্থের নামকরণ। এই গ্রন্থে চরিত্র-প্রসঙ্গ জাতীয় আরও গুটি কয়েক প্রবন্ধ আছে, যেমন—রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, নেতাজী, সরলাবালা, রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সহকর্মিদ্বয়। ব্যক্তিচরিত্র-প্রসঙ্গ এবং সরস ও চিন্তাপূর্ণ প্রবন্ধ ছাড়া ‘সর্বাপেক্ষা সঙ্কটময় শিকার’ নামের একটি রোমহর্ষক কাহিনী গ্রন্থটির অন্যতম আকর্ষণ। কাহিনীটি বিদেশী গল্পের অনুবাদ হলেও লেখকের সাবলীল রচনার গুণে কোথাও অনুবাদ বলে মনে হয় না। দুর্নিবার কৌতূহল পাঠখকে গল্পের শেষ পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাসে টেনে নিয়ে যায়। এই বইয়ের সব রচনাই দেশ, কথাসাহিত্য ও উল্টোরথ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
কত না অশ্রুজল
‘কত না অশ্রুজল’ বইটির প্রথম প্রকাশ বৈশাখ, ১৩৪২। প্রকাশক—বিশ্ববাণী প্রকাশণী, ৭৯/১ বি মহাত্মা গান্ধী রোড়, কলিকাতা ৯। বইয়ের আকার ডবল মিডিয়ম ষোড়শাংশিত, পাইকা টাইপে ছাপা, পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৭২। ‘কত না অশ্রুজল’ প্রবন্ধটি বইয়ের প্রথম রচনা। গ্রন্থের এক-চতুর্থাংশ ব্যাপী এই রচনার নামেই বইটির নামকরণ। গত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধরত নিহত আহত সৈনিকদের পত্রাবলী এই প্রবন্ধের বিষয়। বইয়ের অন্যান্য রচনার অধিকাংশই হিটলার ও নাৎসী-জার্মানী সম্পর্কিত ‘দ্বন্ধ-পুরাণ’ অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ। এই বইয়ের অধিকাংশ লেখাই দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
হিটলার
‘হিটলার’ বইটিতে সৈয়দ মুজতবা আলীর হিটলার ও নাৎসী জার্মানী সম্পর্কিত সব লেখা একত্রিত করার চেষ্টা হয়েছে। চেষ্টা করা হয় বলার কারণ—এমন আরও পূর্ব-প্রকাশিত কিছু লেখা রয়ে গেছে যা এই গ্রন্থের অন্তর্ভূক্ত হয় নি। এই বইটি আষাঢ় ১৩৭৭-এ বিশ্ববাণী প্রকাশনী, ৭৯/১ বি মহাত্মা গান্ধী রোড, কলিকাতা ৯ থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। আকার ডবল মিডিয়ম ষোড়শাংশিত, পাইকা টাইপ, পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৪। হিটলারের শেষ দশ দিবস ছাড়া অন্য রচনাগুলি (হিটলারের প্রেম, মস্কোযুদ্ধ ও হিটলারের পরাজয়, লক্ষ মার্কের বরমান, কনরাট, আডেনাওয়ার, রাজহংসের মরণগীথি, আবার সেই কামানগর্জন, হিটলার) ‘টুনিমেম’, ‘রাজাউজীর’, ও ‘বড়বাবু’তে পূর্বেই মুদ্রিত হয়েছে ও রচনাবলীর পূর্ববর্তী অংশে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। সেই কারণে ‘হিটলার’ অংশে ঐ রচনাগুলি অন্তর্ভূক্ত হয় নি।
Read online or Download this book
সৈয়দ মুজতবা আলী (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ - ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪) একজন বিংশ শতকী বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা। তিনি তাঁর রম্য রচনা ও ভ্রমণকাহিনীগুলির জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট। শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানের বিশ্বভারতী নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে মুজতবা আলী লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন : দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেন। তাঁর বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমনকাহিনী। এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি হল, "বই পড়ে কেউ দেউলিয়া হয়না।" তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা ৩০।
বিস্তারিত